মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন

একদিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীরা বঞ্চিত

একদিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীরা বঞ্চিত

স্বদেশ ডেস্ক:

মহামারী করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে দীর্ঘ কয়েক মাসের লকডাউনে ছিল দেশ। ফলে সরকারি চাকরিতে প্রায় চার লাখ শূন্যপদ থাকলেও নিয়োগ বন্ধ ছিল। এখন করোনার প্রকোপ কমায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু একদিনে একাধিক পরীক্ষা নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। দিনে একটি থেকে ২১টি পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়ার নজির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রার্থীরা সব পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একজন প্রার্থী একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও মাত্র একটি বা দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন। অথচ একেকটি আবেদনে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকাও খরচ হয়। কিন্তু পরীক্ষা দিতে না পারায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

আগামী শুক্রবার একদিনেই ১৪টি নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পরীক্ষা একই সময়ে পড়েছে। এতে অনেক প্রার্থীই একটি কিংবা দুটির বেশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর একদিনে ২১, ২৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি এবং ১ অক্টোবর ১৮ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একদিনে এতগুলো পরীক্ষা নেওয়াকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে দিনে দুটি বা তিনটি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, করোনার প্রকোপ কমায় সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ তাড়াহুড়ো করে লোকবল নিয়োগে হাত দিয়েছে। ফলে সবাই নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী পরীক্ষা নিচ্ছে। কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। পিএসসির নির্ধারণ করা তারিখ দেখে অন্য প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার সময়সূচি ঠিক করতে পারে। এতে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

নোয়াখালী থেকে আসা একজন চাকরিপ্রার্থী গোলাম সারওয়ার আমাদের সময়কে বলেন, কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আগামী শুক্রবার যে ১৪টি পরীক্ষা হওয়ার কথা, সেখানে আমি চারটিতে আবেদন করেছি। অথচ মাত্র দুটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাব আমি। একটি সকালে, অন্যটি বিকালে। পরীক্ষাগুলো পর্যায়ক্রমে হলে সবগুলোতে অংশ নিতে পারতাম। পরীক্ষাগুলো সংশ্লিষ্টরা এক দপ্তরের সঙ্গে আরেক দপ্তর সমন্বয় করে নিলেই আমাদের জন্য ভালো হতো। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে এমবিএ (মার্কেটিং) করা জুয়েল রানা বলেন, একের পর এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। একটা না একটা চাকরি হবেই। কিন্তু সব পরীক্ষায় অংশই নিতে পারছি না। শুক্রবার যে ১৪টি পরীক্ষা হবে সেখানে মাত্র দুটিতে অংশ নিতে পারব। তিনটিতে আবেদন করেছিলাম। ফলে একটি আবেদনে আমার টাকাটা অপচয়ই হলো। বেকারদের এমনিতেই চলতে কষ্ট। এর ওপর টাকা খরচ করে আবেদন করেও পরীক্ষা দিতে না পারাটা খুবই কষ্টের। কর্তৃপক্ষগুলোকে এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসারও দাবি জানান জুয়েল রানা।

শুক্রবার যে ১৪টি পরীক্ষা হওয়ার কথা তার কয়েকটি স্থগিত করার দাবি এসেছে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে। তারা বলছেনÑ সব প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা নিলে চাকরিপ্রত্যাশীরা উপকৃত হবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক সচিব বলেন, একই দিনে একই সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তামাশা করার কোনো মানে হয় না। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে পরীক্ষা নিলে কোনো ঝামেলা থাকার কথা নয়। সম্প্রতি একই দিনে একাধিক পরীক্ষা নেওয়ার একটি প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে। এতে চাকরিপ্রত্যাশীরা বিপাকে পড়েছেন। এটির একটি সমাধান জরুরি। প্রয়োজনে দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির পরীক্ষাও পিএসসির মাধ্যমে নেওয়া হোক।

শুক্রবার নিয়োগ পরীক্ষা নেবে তিতাস গ্যাস, বিসিএসআইআর, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পিএসসি, এনএসআই, গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি, সাধারণ বীমা করপোরেশন, জালালাবাদ গ্যাস, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পদ্মা অয়েল।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আরও আসছে

১০টি পদে ১২৩ কর্মকর্তা নেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া সরকারি ডাক, জীবন বীমা, পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তর, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ প্রায় শতাধিক সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চলমান রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংক-বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও বিপুলসংখ্যক নিয়োগ কার্যক্রম চলমান। নভেম্বরের শেষ দিকে আসছে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি। এই বিসিএসে দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা নিয়োগ পাবে বলে জানা গেছে। এনজিওগুলোও তাদের শূন্যপদে নিয়োগ দিচ্ছে। চাকরির জন্য উন্মুখ তরুণ-তরুণীদের জন্য এগুলো আশার খবর হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগও আছে। সম্প্রতি অনিয়মের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২ হাজার ৬৮৯ জনের নিয়োগ বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘স্ট্যাটিস্টিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’-এর সবশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদ ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি। এর বিপরীতে শূন্যপদ তিন লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি। ১৬ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে মাসিক সমন্বয়সভায় শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত করতে কমিশনারদের নির্দেশ দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, প্রায় পৌনে ৪ লাখ শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনাকালে চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পোষাতে বয়সেও ২১ মাসের ছাড়া দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সরকারি চাকরির সব শূন্যপদ পূরণ করা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877